Women marriage amendment Bill 2021 !! বিবাহ আইন ২০২১ !!
2006 সালে প্রণীত বাল্যবিবাহ আইন সংশোধন করে এই বিল আনা হচ্ছে। এটি আনার উদ্দেশ্য নারীদের বিয়ের বয়স পুরুষের সমান করা।
বাল্যবিবাহ নিষেধাজ্ঞা সংশোধনী বিল - ২০২১ ( Child Marriage Amendment Bill 2021 ), ২১ ডিসেম্বর ২০২১ মঙ্গলবার লোকসভায় বিরোধী দলের প্রবল
বিরোধিতার মধ্যে দিয়ে পেশ করা হয়েছিল, যেখানে বিলটিকে মেয়েদের বিবাহের ন্যূনতম আইনি বয়স ১৮ বছর থেকে ২১ বছর করতে বলা হয়েছে। গত বুধবারই ( ২১ ডিসেম্বর ২০২১) এই বিল আনার অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা।
এই বিল সম্পর্কে, মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি নিম্নকক্ষে বলেছিলেন যে তিনি নিজেই এই বিলটিকে সরকারের পক্ষ থেকে স্থায়ী কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব করছেন যাতে এটি খোলামেলা আলোচনা করা যায়। বিভিন্ন বিরোধী দলের সদস্যরাও বিলটি বিবেচনার জন্য সংসদের স্থায়ী কমিটিতে পাঠানোর দাবি জানিয়েছিলেন।
👉 কি আছে এই বিলে ( women marriage amendment Bill 2021 in Bengali ) ?
২০০৬ সালে প্রণীত বাল্যবিবাহ আইন সংশোধন করে এই বিল আনা হচ্ছে। এটি আনার উদ্দেশ্য নারীদের বিয়ের বয়স পুরুষের সমান করা। বিলের খসড়ায় বলা হয়েছে, মেয়েদের বিয়ের ক্ষেত্রে কোনো ধর্মের ব্যক্তিগত আইন ও প্রথা প্রযোজ্য হবে না এবং বিল পাস হওয়ার পর ২১ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে করা আইনত অপরাধ হবে। এ ছাড়া বিলে বলা হয়েছে, "নারীরা যতক্ষণ না তাদের শারীরিক, মানসিক ও স্বাস্থ্য সহ সকল ক্ষেত্রে অগ্রগতি না করে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা অগ্রগতি দাবি করতে পারি না।"
👉 ব্রিটিশ সরকারে প্রথমবারের মতো একটি শারিরীক সম্পর্ক স্থাপনের আইন করা হয় ( Age of Consent Act 1890 in Bengali )
বাল্যবিবাহ আইনের তারিখ জানতে হলে যেতে হবে ১৮৯০ সালে, সেই সময়ে ব্রিটিশ সরকার প্রথমবারের মতো বিয়ে সংক্রান্ত আইন করেছিল ( Marriage Act 1890 ) । এই বিল তৈরির পেছনের কারণ ছিল মেয়ে শিশু ধর্ষণ। আসলে ফুলমণি নামের এক মেয়ের বিয়ে হয়েছিল হরিমোহন নামে ৩০ বছর বয়সী এক ব্যক্তির সঙ্গে। বিয়ের পর দুজনের সহবাসের ফলে ফুলমণির মৃত্যু হয়। কিন্তু হরিমোহন তার স্বামী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এরপর ব্রিটিশ সরকার এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে একটি আইন প্রণয়ন করে যা ছিল Age of Consent Act 1890 । এই আইনে, শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য মেয়েদের সম্মতির বয়স বাড়িয়ে 12 বছর করা হয়েছিল। এই আইন বহু বিপ্লবী নারীর সমর্থন পেয়েছিল।
👉 The Child Marriage Restraint Act 1929 in Bengali ( Marriage Act 1929 in Bengali )
এরপর ১৯২৯ সালে নারীদের বিয়ে সংক্রান্ত একটি আইন পাশ হয় যা The Child Marriage Restraint Act 1929 বা Sarada Act 1929 নামে পরিচিত। এই আইনে মেয়েদের বিয়ের বয়স রাখা হয়েছে ১৪ বছর এবং ছেলেদের ১৮ বছর। এই সিদ্ধান্ত নারীদের কাছ থেকে অনেক সমর্থন পেয়েছিল কিন্তু তৎকালীন ভারতে এর খুব একটা প্রভাব দেখা যায়নি। বলা হয়, তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরোধিতা করতে চায়নি।
👉 Marriage Amendment Act 2006 in Bengali ~
কিছু সময়ের পর এই আইনে পরিবর্তন আনা হয় এবং মেয়েদের বিয়ের বয়স 18 বছর এবং ছেলেদের 21 বছর করা হয়। বর্তমানে আমাদের দেশে বাল্য বিবাহ আইন 2006 প্রযোজ্য, এই অনুসারে, যদি কোন মেয়ের 18 বছর বয়সের আগে বা কোন ছেলের 21 বছর বয়সের আগে বিয়ে হয়, তবে তা আইনত অপরাধ হবে, এবং এটি বাল্যবিবাহের ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে। যে ব্যক্তি এটি করবে তার 2 বছরের জেল বা এক লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
এই আইনটি সংশোধন করে, সরকার লোকসভায় বাল্যবিবাহ নিষেধাজ্ঞা সংশোধনী বিল 2021 (Prohibition of child marriage Amendment Bill 2021 ) পেশ করেছে। বিলটি পাস হওয়ার পর ২১ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে দেওয়া আইনত অপরাধ হবে। তবে এখনো পর্যন্ত এটি আইনে পরিণত হয়নি কেননা এই বিলটি লোকসভায় পাস হওয়ার পর রাজ্যসভায় যাবে, রাজ্যসভায় পাওয়ার পর রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে, রাষ্ট্রপতি সিগনেচার করলে তবেই আইনে পরিণত হবে, এর পূর্বে নয়।
বর্তমান আইন অনুসারে ( Marriage Amendment Act 2006 ) , পারসি বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদ আইন 1936, বিশেষ বিবাহ আইন 1954, ভারতীয় খ্রিস্টান বিবাহ আইন 1872 এবং হিন্দু বিবাহ আইন 1955, সব অনুসারে, বিয়ে করতে ছেলের বয়স কমপক্ষে 21 বছর এবং মেয়ের বয়স কমপক্ষে 18 বছর হতে হবে।
👉 মন্তব্য ~
ছেলে ও মেয়েদের বিয়ের বয়স সমান করলে আমাদের সমাজে সমতা আসবে না, যতক্ষণ না আমরা নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করি। আসলে মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হল স্কুল থেকে ড্রপ আউট। ভারতীয় স্কুল ব্যবস্থায় মেয়েদের প্রতি অনেক উদাসীনতা রয়েছে। এছাড়া যৌন হয়রানির ঘটনাগুলি, বেশিরভাগ স্কুলে পরিষ্কার টয়লেটের অভাব থেকে শুরু করে স্কুলে ভাল সুযোগ-সুবিধা অভাব, নিরাপত্তার অভাব এবং লিঙ্গ বৈষম্য সম্পর্কিত অনেক কারণ রয়েছে, যার ফলে এমন মেয়েরা অল্প বয়সেই স্কুল ছেড়ে দেয়। ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে-৪ অনুযায়ী, দেশে বেশির ভাগ মেয়ের বিয়ে হয় ১২ বছর স্কুলে যাওয়ার ৫ বছর পর। তাই মেয়েদের, বিশেষ করে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের জন্য উন্নত শিক্ষা ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। সঙ্গে মেয়েদের সমান কর্মসংস্থানের সুযোগ দিতে হবে।
0 Comments